সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৫০ হাজার ডলার ঘুষ নিয়েছিলেন ট্রাম্পের ‘বর্ডার জার’

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মুক্তজমিন ডিজিটাল রিপোর্ট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বর্ডার জার’ (সীমান্ত ও অভিবাসনবিষয়ক উপদেষ্টা) টম হোম্যান সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছিলেন। গত বছর কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআই-এর এক গোপন অভিযানে এমন দৃশ্য ধরা পড়েছিল। গতকাল রোববার এ ঘটনার বিষয়ে জানাশোনা থাকা দুটি সূত্রের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

এফবিআই-এর এক সদস্য একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সেজে হোম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং তাঁকে ৫০ হাজার ডলার ভর্তি একটি ব্যাগ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ হোম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষের তদন্ত শুরু করলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

গতকাল সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সের সঙ্গে এই গোপন তদন্তের বিষয়ে কথা বলেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘুষ নেওয়ার বিনিময়ে হোম্যান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দেওয়ার পর অভিবাসন-সংক্রান্ত সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেবেন।

একটি সূত্র বলেছে, এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল তদন্ত বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে হোম্যানের বক্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স।

গতকাল সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সের সঙ্গে এই গোপন তদন্তের বিষয়ে কথা বলেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘুষ নেওয়ার বিনিময়ে হোম্যান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দেওয়ার পর অভিবাসন-সংক্রান্ত সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেবেন।

গতকাল রোববার কাশ প্যাটেল এবং উপ-অ্যাটর্নি জেনারেল টড ব্লাঞ্চ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই ব্যাপারটি মূলত আগের প্রশাসনের সময়ে শুরু হয়েছিল এবং এফবিআইয়ের কর্মী ও বিচার বিভাগের প্রসিকিউটররা এটি বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছেন। এটাকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বলে বিবেচনা করার মতো কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাননি তাঁরা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মার্কিন জনগণের প্রতি প্রকৃত হুমকির দিকে বিচার বিভাগের অবশ্যই মনোযোগী থাকা উচিত, ভিত্তিহীন তদন্তে নয়। তাই এই তদন্ত বন্ধ করা হয়েছে।’

রয়টার্সকে একটি সূত্র বলেছে, ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিকে হোম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। মূলত জাতীয় নিরাপত্তা–সংক্রান্ত অন্য একটি তদন্ত করতে গিয়ে এ তদন্তটি শুরু হয়।

সূত্র বলেছে, সেই পৃথক তদন্তে মূল অভিযুক্ত বারবার হোম্যানের নাম উল্লেখ করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, ভবিষ্যতে সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ নিচ্ছেন হোম্যান।

এফবিআই হোম্যানের অভিযোগ তদন্তে গোপনে অভিযান চালিয়েছিল। তাদের ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, কাভা রেস্তোরাঁ থেকে হোম্যান ৫০ হাজার ডলারের ঘুষ ভর্তি একটি ব্যাগ সংগ্রহ করছেন।

এরপর এফবিআই হোম্যানের অভিযোগ তদন্তে গোপনে অভিযান চালায়। তাদের ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, কাভা রেস্তোরাঁ থেকে হোম্যান ৫০ হাজার ডলারের ঘুষ ভর্তি একটি ব্যাগ সংগ্রহ করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী মানুষদের বিতাড়িত করতে ট্রাম্প প্রশাসনের চালানো অভিযান দেখভাল করেন হোম্যান। হোয়াইট হাউসের দাবি, হোম্যান কাউকে কোনো সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার কাজে জড়িত নন।

হোয়াইট হাউসের উপপ্রেস সেক্রেটারি অ্যাবিগেল জ্যাকসন এক বিবৃতিতে বলেন, তিনি একজন পেশাদার আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং জীবনভর সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও দেশের জন্য অসাধারণ কাজ করছেন।

সূত্র বলছে, জানুয়ারিতে ট্রাম্প যখন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন, তখন টেক্সাসের ওয়েস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টে হোম্যানের বিরুদ্ধে গ্র্যান্ড জুরির তদন্ত তখনো প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল।

একটি সূত্র বলেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে (বর্তমানে ফেডারেল বিচারক) এ মামলার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছিল। সেই সময়ে তিনি তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি এটিকে ‘ডিপ স্টেট’ অভিযানের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, অনির্বাচিত কর্মকর্তারা গোপনে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

প্যাটেল ও ব্লাঞ্চের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই তদন্ত ‘স্পষ্টত রাজনৈতিক’ ছিল এবং বাইডেন প্রশাসনের বিচার বিভাগ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সহযোগীদের নিশানা করতে তাঁদের সক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মেয়াদকালে হোম্যান মার্কিন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এর কার্যনির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

মাঝের যে চার বছর ট্রাম্প ক্ষমতায় ছিলেন না, তখন হোম্যান একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তাঁর ওই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কোম্পানিকে অভিবাসন-সংক্রান্ত সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করত।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
All rights reserved www.mzamin.news Copyright © 2023