বেপরোয়া উঠতি শিশু-কিশোর; আতঙ্কে অভিভাবকেরা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা

বেপরোয়া হয়ে উঠছে উঠতি বয়সের শিশু-কিশোররা। খুন-জখম, অপহরণ থেকে শুরু করে অনেক অপরাধের সাথেই জড়িয়ে পড়ছে এরা। এদের ভয়ানক আচরণে শুধু পরিবারই নয়; কোথাও কোথাও পুরো এলাকা অস্থির।

 

রাজধানীর এমন কোনো এলাকা নেই, যে এলাকায় উঠতি বয়সের শিশু-কিশোরের উচ্ছৃঙ্খলতা লক্ষ করা যায় না। প্রকাশ্যে ধূমপান, মোড়ে মোড়ে জড়ো হয়ে হৈহুল্লোড়সহ সুযোগ পেলেই অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ায় এমনকি খুন-জখম মারামারিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর নাম করা তিনটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

 

গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের কলেজের শিক্ষার্থীরা বাসায় ফেরার সময় সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় সিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদেরকে ছুরিকাঘাত করে।

 

তবে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেছে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সিটি কলেজের সামনে এসে আড্ডা দেয় এবং মেয়েদেরকে টিজ করে। এ নিয়েই এই ঘটনা ঘটেছে। এর আগে সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ ও আব্দুর রউফ কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। সেখানেও বেশ কয়েকজন আহত হয়। রাতে প্রায় ১০ জন ছাত্রকে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা মুচলেকা দিয়ে তাদেরকে ছাড়ায়।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে তারা সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখার পরেও এমন ঘটনায় জড়ানোয় তারা রীতিমতো আতঙ্কিত।

 

ঢাকার কেরানীগঞ্জে অপহরণের চার দিন পর মোকসেদুল মমিন (১৭) নামে এক মাদরাসাছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের সহপাঠী মো: ফাহিমকে (১৯) আটকের পর তার দেখানোমতে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে মমিনের পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় মুক্তিপণ। দুর্বৃত্তরা অপহরণের পরই মমিনকে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ায়। এতে মমিন ঘুমিয়ে পড়লে চাকু দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় চানমিয়া ওহাবুল উলুম মাদরাসার ছাত্র।

 

ফাহিম তার সহপাঠী। লাশ উদ্ধারের চার দিন আগে অপহরণ করা হয় মোকসেদুলকে। পরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফাহিমকে গ্রেফতার করা হলে তার দেখানোমতে লাশটি উদ্ধার করা হয়। অপহরণের পর মোকসেদুলের পরিবারের কাছে দুই কোটি টাকা দাবি করা হয়। দুই দফায় বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ওই দুর্বৃত্তরা।

 

মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, শিশু-কিশোরদের মধ্যে এই অপরাধপ্রবণতার পেছনে অনেক কারণ কাজ করতে পারে। তবে প্রথমত পরিবারেরই উচিত তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা। পরিবার থেকে ভালো শিক্ষা পেলে শিশু-কিশোররা অবশ্যই ভালো হতে বাধ্য। আবার অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্যের প্রতিবাদ করতে গিয়েও শিশু-কিশোররা উল্টো অপরাধে জড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়াটাও যে অপরাধ সেটিই শিশু-কিশোরদের বোঝাতে হবে।

 

মানবাধিকারকর্মী মোস্তফা সোহেল বলেছেন, আজকে সামাজিক বন্ধন ভেঙে পড়েছে। সব কিছু রাজনীতিকীকরণ হওয়ায় মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে শিশু-কিশোরদের ওপরও সেই প্রভাব পড়েছে। সামাজিক বন্ধন থাকলে অনেক কিছুই সমাধান সম্ভব ছিল আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তা ছাড়াই। এখন সেটি সম্ভব হচ্ছে না।

 

আর দেশে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকে, সঙ্কট থাকে তখন সামাজিক অস্থিরতা এমনিতেই থাকবে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর মানুষের কোনো আস্থা নেই, যে কারণে সমাজে হানাহানি বাড়ছে। আর এর প্রভাব শিশুদের ওপরও পড়ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
All rights reserved www.mzamin.news Copyright © 2023