দাড়ি-হিজাবের কারণে চীনে বন্দি উইগুর মুসলিমরা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

ডেস্ক রিপোর্ট

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বন্দিশিবিরে আটক লাখো উইগুর মুসলিমের ভাগ্য কীভাবে নির্ধারিত হচ্ছে তার সুস্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছে ফাঁস হওয়া এক নথিতে। সেখানে দাড়ি রাখা, হিজাব পরা ও ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের মতো কারণ দেখিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে তাদের।

 

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, ওই নথিতে তিন হাজারেরও বেশি উইগুর মুসলিমের নামের একটি তালিকা রয়েছে এবং তাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের ব্যক্তিগত তথ্য বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। কীভাবে তারা প্রার্থনা করেন, পোশাক পরেন, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আচরণ- এ সব তথ্যই রয়েছে ১৩৭ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট ওই নথিতে।

 

চীন বরাবরই উইগুরদের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং তাদের দাবি সন্ত্রাস ও ধর্মীয় মৌলবাদ প্রতিহত করছে তারা। এরই মধ্যে নতুন করে ফাঁস হলো এসব তথ্য।

 

গত বছর কিছু নথি যে সূত্র থেকে ফাঁস হয়েছিল, তারাই নতুন এ নথি ফাঁস করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নথিগুলো আসল বলে মনে করেন চীনের জিনজিয়াং পরিচালনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. অ্যাড্রিয়ান জেঞ্জ। তিনি বলেন, প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশীলন রোধে বেইজিংয়ের শাস্তি ও নিপীড়নের শক্তিশালী প্রমাণ চমকপ্রদ এ নথিগুলো।

 

এতে উল্লেখিত শিবিরগুলোর মধ্যে রয়েছে চার নম্বর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। চীনা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় গত বছরের মে মাসে বিবিসি’র একটি দল সেটি পরিদর্শন করেছিল বলে শনাক্ত করেছেন ড. জেঞ্জ।

 

ওই শিবিরের ৩১১ ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ধর্মীয় অভ্যাস, আত্মীয়, বন্ধু ও প্রতিবেশিদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে অনুসন্ধানের বিস্তারিত তথ্য বর্ণিত আছে ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে। প্রতিটি পৃষ্ঠায় কলাম ও সারি করে স্প্রেডশিট আকারে সুবিন্যস্তভাবে সেসব লেখা হয়েছে। অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে শেষ কলামে লেখা রয়েছে তাদের বন্দি রাখা হবে নাকি মুক্ত করা হবে এবং আগে মুক্ত করা কাউকে আবারও বন্দিশিবিরে ফিরে আসতে হবে কি-না।

 

প্রতিটি পৃষ্ঠায় কলাম ও সারি করে স্প্রেডশিট আকারে সুবিন্যস্তভাবে নথিগুলো লেখা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীতএ শিবিরগুলো মূলত স্কুল, চীনের এমন দাবির সরাসরি বিরুদ্ধে যায় এ নথিগুলো। ড. জেঞ্জ বলেন, এ নথিগুলো এ সম্পর্কে আমাদের গভীর ধারণা দেয় যাতে আমরা এমন ব্যবস্থার নেওয়ার আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যারা কাজ করেছেন, তাদের মানসিকতার সূক্ষ্ম আদর্শগত এবং প্রশাসনিক বিষয় সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাচ্ছি।

 

যেমন, ৫৯৮ নম্বর সারিতে হেলচেম নামে ৩৮ বছর বয়সী এক নারীর কথা রয়েছে, যাকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে কারণ কয়েক বছর আগে তিনি মাথায় হিজাব পরতেন। এমনই বিভিন্ন কারণে বন্দি করে রাখা হয়েছে উইগুর মুসলিমদের। কেউ হয়তো পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন, যা জিনজিয়াংয়ের কাছে মৌলবাদী আচরণ। ৬৬ নম্বর সারিতে মেমেত্তোহতি নামে ৩৪ বছর বয়সী এক পুরুষের কথা রয়েছে, যাকে ‘কার্যকর কোনো ঝুঁকি’ নয় উল্লেখ করার পরও শুধু পাসপোর্টের আবেদন করায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। ২৩৯ সারির ২৮ বছর বয়সী নুরমেমেতকে বন্দি করার কারণ, ‘তিনি একটি ওয়েবলিংকে ক্লিক করে নিজের অজান্তেই একটি বিদেশি ওয়েবসাইটে পৌঁছে গিয়েছিলেন’। এছাড়া, দাড়ি রাখার কারণেও বন্দি করে রাখা হয়েছে কয়েকজনকে।

 

নথিতে উল্লেখিত ৩১১ ব্যক্তি জিনজিয়াংয়ের কারাকাক্স কাউন্টির, যেখানে ৯০ শতাংশ অধিবাসীই উইগুর।

 

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ে উইগুরদের বাস। তাদের বেশিরভাগই মুসলিম। গত কয়েক যুগে এ প্রদেশে লাখ লাখ হান চাইনিজের বসতি স্থাপনের কারণে জাতিগত ও অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার হতে শুরু করেন উইগুর মুসলিমরা। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকার অজুহাত দেখিয়ে বেইজিং সহিংসভাবে দমন করে তাদের। উইঘুরদের পাশপাশি প্রদেশটির অন্য মুসলিম সম্প্রদায় কাজাখ ও কিরগিজদেরও বন্দিশিবিরে আটক করে রাখা হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
All rights reserved www.mzamin.news Copyright © 2023