কিস্তি পরিশোধে বেতন শেষ, গৃহঋণে চাই আরও সুবিধা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা

সহজে বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য সরকারি কর্মচারীদের স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছে সরকার। তবে কিছু জটিলতা থাকায় পুলিশ সদস্যদের জন্য এ ঋণ গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করলে বেতনের সব টাকা চলে যাচ্ছে।

 

তাই এ ঋণের কিছু শর্ত আরও সহজ করার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় এখনও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবু নাছের ভূঁঞা স্বাক্ষরিত অর্থ সচিবের নিকট পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালার আওতায় ঋণের আবেদন পর্যালোচনা এবং এর ব্যবস্থাপনার বিষয়ে একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, বাংলাদেশ পুলিশের জন্য কমিউনিটি ব্যাংক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জন্য সীমান্ত ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও এনটিএমসির জন্য ট্রাস্ট ব্যাংক এবং আনসার ও ভিডিপির জন্য আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে যেন বিদ্যমান ঋণ গ্রহণ ও বিতরণ করা যায় সে লক্ষ্যে অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করা হবে। বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।

 

এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) রুহী রহমানের সভাপতিত্বে এ বিষয়ে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় তার একটি কার্যপত্রের কপিও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

 

ওই বৈঠকে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে অতিরিক্ত ডিআইজি মাহবুবুর রহমান ভূঁঞা জানান যে, ‘বিদ্যমান নীতিমালা অণুযায়ী ঋণ গ্রহণ করতে হলে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকে বেতন হিসাব খুলতে হবে। কিন্তু পুলিশের বর্তমান নিজস্ব কমিউনিটি ব্যাংকে বেতন-বিলের হিসাব খোলা ও চলমান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জটিলতা নিরসন প্রয়োজন।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী, বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ ও ঋণগ্রহীতা সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে আলোচনা করে নীতিমালার আলোকে ঋণ পরিশোধে কিস্তির হার নির্ধারণ করবে। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রাপ্ত কিছু প্রাথমিক অনুমোদনে দেখা যাচ্ছে যে, ঋণগ্রহীতা প্রতি মাসে যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করেন তা তার বেতনের প্রায় সমান। ঋণের কিস্তি পরিশোধের পর অনেকের অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকারও কম অর্থ থাকে।’

 

মাহবুবুর রহমান ভূঁঞা বলেন, ‘এত কম টাকা দিয়ে সে কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে তা বুঝা যায় না। এ রকম ঋণগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারি কর্মচারীর আচরণ সংক্রান্ত বিধি-বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ক্ষেত্রে সরকারের অন্যান্য নীতিমালা, নির্দেশনা, চাকুরী বিধিমালা, আচরণ বিধিমালার নির্দেশনার সঙ্গে গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা সমন্বয় করা উচিত।’

 

এ প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমান বলেন, ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল (এনআইএস) সরকার প্রচলন করেছে। এ ঋণের কিস্তি কাটার পরিমাণ এমন হতে হবে যাতে সরকারি কর্মচারী দুর্নীতি ও অসৎ পথে অগ্রসর হতে বাধ্য না হয়। সবক্ষেত্রে আমাদের শুদ্ধাচার কৌশলপত্রের নীতিমালা অনুসরণ করা প্রয়োজন।’

 

সর্বশেষ গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান জনবল দুই লাখেরও অধিক। এ জনবলের বেতন-ভাতা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানাধীন কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে স্যালারি অ্যাকাউন্ট খোলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উক্ত ব্যাংকে দেশের যেকোনো নাগরিক ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন এবং বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক নাগরিক ব্যাংকটিতে হিসাব খুলছেন।

 

এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ কার্যক্রম চালু রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পুলিশ সদস্যদের ঋণ নেয়া বেশ কঠিন। তাই কমিউনিটি ব্যাংকেও এ ঋণ কার্যক্রম চালুর অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

 

এদিকে সহজে বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য সরকারি কর্মচারীদের ঋণে সুদের হার গত ৩০ ডিসেম্বর আরও এক দফা কমিয়েছে সরকার। ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের স্বল্প সুদে গৃহঋণ দিতে ২০১৮ সালে যে নীতিমালা করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়, সুদের হারের দিক থেকে এখন তা আরও শিথিল করা হয়েছে।

 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত ৩০ ডিসেম্বর নীতিমালা সংশোধন করে গৃহঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। যা ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। এই হার আগে ছিল সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। আরও আগে তা ছিল সরল সুদ, এখনও তাই রয়েছে। অর্থাৎ সুদের ওপর কোনো সুদ আরোপ করা হবে না।

 

মূল নীতিমালায় বলা হয়েছে, ১০ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ সুদ দেবেন ঋণগ্রহণকারী, বাকি ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসাবে দেবে। নীতিমালার ৭.১ (ঘ) (৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সুদের হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, নতুন সুদের হার শুধু নতুন ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

 

নীতিমালা অনুযায়ী, চাকরির গ্রেড মেনে ২০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ পাবেন সরকারি কর্মচারীরা। শুরুতে বেসামরিক ও সামরিক কর্মচারীদের জন্য এ সুবিধা চালু করা হলেও পরে বিচারক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরাও এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।

 

বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনসহ সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বল্প সুদে এ ধরনের ঋণ দিয়ে আসছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
All rights reserved www.mzamin.news Copyright © 2023