স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া
একদিকে জনবসতি। অন্য পাশে ফসলের মাঠ। মাঝখানে ‘অভিশপ্ত’ বিল। তার বুকে দাঁড়িয়ে আছে একটি কালভার্ট। কালভার্টের দুই পাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। তাই কালভার্টটি ব্যবহার করতে গ্রামবাসী তৈরি করেছেন বাঁশের সাঁকো। এটি বগুড়ার ধুনট উপজেলার চিকাশি ইউনিয়নের জোড়শিমুল চুলকানি বিলের দুর্দশার চিত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধুনট উপজেলার জোড়শিমুল ও সারিয়াকান্দি উপজেলার বিবিরপাড়া গ্রামের মাঝে অবস্থিত চুলকানি বিল। এই বিল দুই উপজেলাবাসীর একটি অভিশাপ। বিল পারাপারে নেই কোনো ব্যবস্থা। তাই দীর্ঘদিন ধরে বিলের দুই পারের মানুষ প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে আসছে। এ অবস্থায় স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিলের বুকে কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বিলের বুকে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ টাকা। কালভার্ট নির্মিত হলেও তার দুই পাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। ফলে বিলের বুকে জনদুর্ভোগের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে কালভার্টটি। অবশেষে স্থানীয়দের উদ্যোগে এ বছর কালভার্টের পাশে সড়কের পরিবর্তে তৈরি করা হয় বাঁশের সাঁকো। আর ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর উপর দিয়ে কালভার্ট মাড়িয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ বিলের পথে যাতায়াত করছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মাঠে ফসল ফলানোর আয় দিয়ে চলে তাদের সংসার। বিলের কারণে মাঠের সাথে কৃষাণ-কৃষাণীদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তাই মাঠের জমিতে কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জমিতে আশানুরূপ ফসল উৎপাদনেও ব্যর্থ হচ্ছে। এতে আর্থিক সংকটে পড়ছে গ্রামের কৃষকেরা।
এ বিষয়ে উপজেলার জোড়শিমুল গ্রামের আদর্শ কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, বিলের বুকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য অনেক জনপ্রতিনিধি কথা দিয়েছেন। কিন্ত কেউ কথা রাখেননি। তাই নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রমে কাঁচা সড়ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতিমধেই সড়কের প্রায় ২০ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে। কিন্ত স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির বাঁধার মুখে আপাতত সড়কের কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন বলেন, এলাকাটি সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। সমস্যার বিষয়গুলো সমাধানের জন্য স্থানীয় লোকজনের সাথে আলোচনা চলছে। সরকারি বরাদ্দ সাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে এলাকাবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।