শাজাহানপুর(বগুড়া)প্রতিনিধি
বগুড়ার শাজাহানপুরে দিনভর এমনকি দিনের আলো নিভে গেলেও মাটির ট্রাকের সারি। একের পর এক ট্রাকের যাতায়াত। রাতে দূর থেকে মনে হবে গ্রাম গুলোতে যেন কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে। এগিয়ে গেলেই ধারণা পাল্টে যাবে! কৃষিজমির উপরি ভাগের মাটি লুট চলছে! দিন শেষে রাতের আঁধারেও লুট হচ্ছে কৃষিজমির উর্বর মাটি। কিছুতেই থামছে না। দিনদিন বেড়েই চলেছে মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ব।
শীতের রাত কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা উপজেলার গ্রামগুলো। রামচন্দ্রপুর গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা গেল স্থানীয় সড়কে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টি ট্রাক আটকে রয়েছে। একটি মাটির ট্রাক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে উল্টে পড়ে আছে। সেটি না উঠা পর্যন্ত অন্যান্য ট্রাকগুলোও চলাচল করতে পারছে না। এসব ট্রাকে করে লুট হচ্ছে কৃষিজমির উর্বর মাটি। মাদলা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামসহ কাজীপুর, নন্দগ্রাম ও বলদিপালান গ্রাম থেকে কৃষিজমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অপরদিকে দিনের আলোতে উপজেলার চকজোড়া গ্রামে গিয়ে দেখাগেছে, সেখানেও এ্যাসকেভেটর দিয়ে লুট হচ্ছে কৃষিজমির উর্বর মাটি। সাজাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে গভীর গর্ত করে কৃষিজমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাতেও এই গ্রাম গুলোর কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা হয়। আড়িয়া ইউনিয়নের নয়মাইল এলাকার বামুনিয়া গ্রাম থেকেও কয়েকদিন হলো মাটি কাটা শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, শাজাহানপুর উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা আছে। এসব ইটভাটায় মাটির চাহিদা পূরণ করতে কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে করে ফসলি জমিগুলো পুকুরে পরিণত হচ্ছে। পরে এসব পুকুরে মাছ চাষ হলেও অবৈধভাবে জমির শ্রেণী পরিবর্তন হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে প্রতিশতক জমির মাটি কিনে নেন দশ থেকে পনের হাজার টাকায়। জমি থেকে মাটি কাটার চুক্তি হয় তিন থেকে চার ফিট পর্যন্ত। অধিকাংশ ফসলিজমি ১৫ থেকে ২০ ফিট পর্যন্ত কাটা হয়েছে। এতে করে ওই জমির আশেপাশের কৃষিজমিগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে তাদের জমির মাটিও বিক্রি করে দেন।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা এসএম আল-আমিন জানান, মাটির উপরিভাগের অংশকে টপসয়েল বলা হয়। কৃষিজমির ৫ থেকে ১০ ইঞ্চির মধ্যেই মাটির উর্বরতা শক্তি থাকে। এই অংশেই মাটিতে জৈব পদার্থ থাকে। পৃথিবীর প্রায় ৯৫ শতাংশ খাদ্য জন্মে এই টপ সয়েল থেকে। অপরদিকে প্রাকৃতিক ভাবে এক ইঞ্চি পুরু উপরিভাগের জমি তৈরী হতে ১০০ থেকে অনেক সময় ৫০০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. মাহমুদা পারভীনের সঙ্গে মুঠোফোনে এ বিষয়ে কথা বলতেই তিনি পরিস্কার করে কিছু না বলেই ফোনের সংযোগ কেটে দেন।