‘করোনা ভাইরাসের কারণে কাজের গতি কমেছে রেল প্রকল্পের’

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা

করোনা ভাইরাসের কারণে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজের গতি কমে গেছে। তবে প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে কাজের গতি অব্যাহত রাখার চেষ্টা চলছে। নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হবেও আশা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।

 

বুধবার (৪ মার্চ) কেরানীগঞ্জের পানগাঁও জাজিরায় স্থাপিত প্রকল্প কার্যালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এসময় বাংলাদেশ রেলওয়ের পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক প্রজেক্ট (পিবিআরএলপি) প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজের গতি কমে গেছে। প্রথমত, জনবল কমে গেছে। দ্বিতীয়ত, চীন থেকে আমরা কিছু যন্ত্রপাতি আনতে পারছি না। এ কারণেও গতি কমেছে।’

 

তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের যেসব শ্রমিক চীনে গিয়ে আটকে গেছেন, তাদের কিছু কিছু লোককে বিশেষ ভিসা ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।’

 

প্রকল্পের প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, ৩৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। চীনের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিমূল্য ২৪ হাজার কোটি টাকা। বাকিটা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে। ৩৮৪ কিলোমিটার এই রেলপথের প্রকল্পে স্টেশন থাকছে ১৪টি। ১০০টি ব্রডগেজ কোচ সংযুক্ত করা হবে। ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এজন্য ইতোমধ্যেই ১৭ জেলায় জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি পাঁচ জেলার জমি অধিগ্রহণের কাজ কিছুটা বাকি আছে। এই প্রকল্পের খুবই গুরুত্বপূর্ণ জোন হলো মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত।

 

পিবিআরএলপি-এর প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘যদিও করোনা ভাইরাসের কারণে কাজের গতি কমেছে। তারপরেও এখানে কর্মরত কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা অতিরিক্তি কাজ করছেন। ফলে আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এই প্রকল্প শেষ করতে পারবো বলে আশা রাখি।’

 

চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)-এর পিবিআরএলপি-এর প্রকল্প পরিচালক ওয়াং কুম জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর সিআরইসি-এর পক্ষ থেকে দুটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো, পদ্মাসেতু রেল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হয় তা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয় লক্ষ্যটি হলো, এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি চালিয়ে নেওয়া। প্রকল্পে কাজ করা কর্মকর্তারা যারা ছুটি কাটাতে চীনে গেছেন, তাদের ছুটি এখনও বহাল রয়েছে, কেননা হুবেই প্রাদেশিক সরকারের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কর্মকর্তাদের ফিরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তারপরও যারা বাংলাদেশে ফেরার অনুমতি পাচ্ছেন, তারা আসার পর কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় রাখা হচ্ছে।

 

তিনি আরও জানান, যে কোনও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো নেওয়ার ফলে এখন পর্যন্ত প্রকল্পে কর্মরতরা কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। ভাইরাস প্রতিরোধে বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে একটি অস্থায়ী হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে।

 

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সিআরইসি-এর দুটি মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন ওয়াং কুম। তিনি জানান, কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এখনও চীনে সম্পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। পাশাপাশি কিছু কর্মকর্তার একাডেমিক সেন্টার ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সিআরইসি।

 

তিনি আরও জানান, হুবেই প্রদেশ ছাড়া চীনের অন্যান্য প্রদেশের কর্মকতারা যারা এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন, ইতোমধ্যেই তারা বাংলাদেশে ফিরেছেন। হুবেই ছাড়া অন্যান্য প্রদেশের চীনা কর্মকর্তাদের ছুটি সংক্ষিপ্ত করা এবং পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের বাৎসরিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যেহেতু কাজের গতি ব্যাহত হয়েছে, তাই তাদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও অ্যালাইনমেন্টের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ৮৯.০৫ শতাংশ বাঁধের ডিজাইন ও ৯২.৮৫ শতাংশ টেস্ট-পাইল ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। ৩৭.০৩ শতাংশ ওয়ার্কিং-পাইল ডিজাইন, ৬৩.০৬ শতাংশ কালভার্টের ডিজাইন, ২৫.০২ শতাংশ বাঁধ নির্মাণের কাজ, ৬০.০৫ শতাংশ টেস্ট-পাইলের কাজ এবং ১৭.০৭ শতাংশ ওয়ার্কিং পাইলের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১১.০৩ শতাংশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের সহযোগীদের কাছ থেকে সাহায্য এবং সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা (অগ্রাধিকারমূলক অংশ) পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ আগামী বছর শেষ হবে।

 

পদ্মা সেতুর ব্যাপারে জানানো হয়, মূল পদ্মা সেতুর জন্য ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩৯টির কাজ শেষ হয়েছে। মোট ৪১টির মধ্যে ২৫টি স্প্যান বসানো হয়েছে। সর্বোপরি এই প্রকল্পের ৮৫.৬৫ শতাংশ দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান, বাংলাদেশে চীনের দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সিলর লিও ঝেন হুয়া, সিআরইসি-এর পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক লিও জিয়ান হুয়া প্রমুখ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
All rights reserved www.mzamin.news Copyright © 2023