স্কুলে স্বস্তির যাত্রা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা

‘স্কুলে যেতে হতো তিনটি গাড়িতে করে। বাড়তি ভাড়ার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছানো নিয়ে থাকত বাড়তি চিন্তাও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারস্বরূপ পাওয়া বাস এসব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে আমাদের। বাসা থেকে বের হয়ে উপহারের এসব বাস দিয়েই কম সময়ে ও সহজে স্বস্তি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে পারছি।’ এমন স্বস্তির কথা সমকালকে জানাল চট্টগ্রাম সিটি গার্লস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিয়া সিদ্দিকা। এমন অনুভূতি কেবল তাসফিয়ার একার নয়; চট্টগ্রামের অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও এখন বলছেন এমন স্বস্তির কথা। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ১০টি বাস পেয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবাই ভালো আছেন। মাত্র পাঁচ টাকা ভাড়া দিয়ে প্রথমবারের মতো স্কুলে আরামদায়ক যাতায়াত করতে পেরে সবাই দারুণ খুশি। তাদের নিয়ে যাতায়াত করা বাসে সরেজমিন পরিদর্শন করে এমন বিষয় উঠে এসেছে সমকালের অনুসন্ধানে।

 

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা ১০ মিনিট। স্পট নগরের ব্যস্ততম মুরাদপুর মোড়। সড়কের পাশে এসে দাঁড়াল বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাস। তার আগেই সেখানে স্কুলের পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু শিক্ষার্থী। তাদের কাউকে দেখা গেছে বাবার হাত ধরে আসতে; কেউ মায়ের সঙ্গে। কেউ কেউ একা। বাস আসার সঙ্গে সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে উঠতে থাকে তারা। ৩০ মিনিটের মধ্যে বাসের প্রায় আসন পূরণ হয়ে যায়।

 

সন্তানদের বাসে তুলে দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল কয়েকজন অভিভাবককে। তাদের একজন এমদাদুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ এসব বাস শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের জন্যও স্বস্তি নিয়ে এসেছে। আগে দুই থেকে তিনটি গাড়ি পরিবর্তন করে সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যেতে হতো। এখন এক বাসে করেই স্কুলে যেতে পারছে।’ আরেক অভিভাবক কানিজ সুলতানা বলেন, ‘মেয়েকে স্কুলে আনা-নেওয়া নিয়ে টেনশনের শেষ ছিল না। তবে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বাসে যাতায়াতের ফলে সেসব টেনশন এখন আর নেই।’

 

১০টা ৫০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পৌঁছে দিতে যাত্রা শুরু করে এক নম্বর রুটের দায়িত্বে থাকা ৩ নম্বরের বাসটি। যাওয়ার পথে কয়েকটি স্থান থেকে উঠে আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় সাদমান নামে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র বলে, ‘বাসা থেকে রিকশা করে আসতাম মুরাদপুর। সেখান থেকে টেম্পোর জন্য প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। অনেকক্ষণ পর সেই টেম্পো মিললেও বসার সিট পেতাম না। দাঁড়িয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর চকবাজার থেকে আবার উঠতে হতো বাসে কিংবা টেম্পোতে। এখন বাসা থেকে হেঁটে মুরাদপুর এসে স্কুল বাসে উঠে কম সময়ে ও মাত্র পাঁচ টাকায় স্কুলে পৌঁছাতে পারছি।’ নগরের বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মুনতাসির বলে, ‘আগে কয়েকটা গাড়ি পাল্টিয়ে অনেক টাকা খরচ করেও নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছতে পারতাম না। এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একটি বাসে করেই কম সময়ে স্কুলে যেতে পারছি। এতে আমার মতো আনন্দিত সবাই।’

 

বাসটি স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে আসার পর সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীরা নামতে থাকে। এসময় ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা ‘সততা বাক্সে’ ৫ টাকা করে দিতে দেখা যায় সবাইকে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘স্কুলবাসগুলো উদ্বোধনের পর থেকে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এসব বাসে কম সময়ে ও নিরাপদে স্কুলে যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।’

 

বাসগুলোর পরিচালন ব্যয় নির্বাহের দায়িত্বে থাকা জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বাস শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর এমন ব্যতিক্রমী কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত ও গর্বিত।’

 

শিক্ষার্থীদের নিরাপদে স্কুলে পৌঁছে দিতে প্রতিটি বাসে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ ও নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তিন থেকে চার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের একজন মিনহাজ চৌধুরী রিফাতকে ছাত্রছাত্রীদের লাইন করে বাসে তোলার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল। রিফাত বলেন, ‘বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বাসগুলোতে যাতায়াত করছে। মা-বাবারা নিজেদের সন্তানকে নিয়ে এসে বাসে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে বাসায় ফিরছেন।’ নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এসব বাস উপহার পেয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মতো আমরাও অনেক খুশি।’

 

বিআরটিসির ডিপো ম্যানেজার এম জিয়াউর রহমান জানান, ১০টি বাস সার্ভিসের জন্য ৭ জন নারীসহ মোট ২০ জন সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সবাইকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। বিআরটিসির স্থায়ী চালক দিয়ে এসব বাস চালানো হচ্ছে। বাসে ছাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াতসহ সার্বিক বিষয় তদারকির সুবিধার্থে মহিলা সহকারী রাখা হয়েছে। বাসের কয়েকজন চালক বলেন, ‘নিরাপদে ও কম টাকায় স্কুলে পৌঁছার পর শিক্ষার্থীদের আনন্দের উচ্ছ্বাস দেখে খুব ভালো লাগে।’ জানা গেছে, এবার প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা এসব স্কুল বাসে করে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছে। পরীক্ষার সময় স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের আনা-নেওয়া করবে বাসগুলো।

 

যেসব রুটে চলছে ১০টি বাস :চট্টগ্রাম নগরের স্কুল ও সড়ক বিবেচনায় নিয়ে ১০টি বাস সার্ভিস চলাচলের জন্য এক ও দুই নম্বর দুটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। এক নম্বর রুটের আওতায় বহদ্দারহাট/মুরাদপুর থেকে চকবাজার-গণি বেকারি-জামালখান-চেরাগী পাহাড়-আন্দরকিল্লা-লালদীঘি কোতোয়ালি হয়ে নিউ মার্কেট পর্যন্ত যাবে। ফিরতি পথেও একই রুটে যাতায়াত করবে। দুই নম্বর রুটের আওতায় বাসগুলো অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর-২নং গেট-জিইসি-টাইগারপাস হয়ে আগ্রাবাদ পর্যন্ত যাতায়াত করবে। একই রুটে ফিরতি পথেও চলাচল করবে প্রতিটি বাস। মর্নিং ও ইভনিং দুই শিফটে চলাচল করছে ১০টি বাস।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
All rights reserved www.mzamin.news Copyright © 2023