মুক্তজমিন ডেস্ক
শীত মৌসুমে অনেকেরই হঠাৎ কানব্যথা হতে পারে। এটির সঙ্গে কানবন্ধও থাকতে পারে। আবার উল্টোটাও হতে পারে। প্রথমে কানবন্ধ, পরে কানব্যথা। সাধারণত কানবন্ধ হওয়ার দুয়েক দিনের মধ্যে কানব্যথা শুরু হতে পারে। তবে প্রথমেই কানব্যথা হলে তা হঠাৎ করেই হয়। এ ব্যথা কিছুক্ষণের মধ্যে তীব্রতায় রূপ নিতে পারে।
এ ধরনের সমস্যার কার্যকারণ হলো-মধ্যকর্ণের সঙ্গে নাসোফ্যারিঙ্গস বা নাকের সবচেয়ে পেছনের অংশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে যে টিউব বা নালি আছে, সেই নালির নাকের পেছনের দিকের মুখটা বন্ধ হয়ে যাওয়া। সাধারণত উর্ধ্ব শ্বাসনালির প্রদাহ, হাঁচি-সর্দি-কাশিতে এ মুখটায় প্রদাহ হয়ে ফুলে যায় এবং সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে থাকে। এ মুখটির মাধ্যমেই মধ্যকর্ণের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের যোগাযোগ রক্ষা হয়ে থাকে। মধ্যকর্ণে বাতাসের যাওয়া আসা নিয়ন্ত্রণ করে এ মুখ। একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে মধ্যকর্ণ বায়ুমণ্ডলীয় বাতাসের চাপের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে। কোনো কারণে মধ্যকর্ণের সঙ্গে বাতাসের যোগাযোগ রক্ষাকারী টিউবটির মুখ বন্ধ হলে কানবন্ধের অনুভূতি হয়।
কানবন্ধ ভাব বেশি সময় থাকলে মধ্যকর্ণের ঝিল্লি থেকে নিঃসৃত তরল বেরিয়ে যাওয়ার পথ না পেয়ে সেখানেই জমতে থাকে এবং এক পর্যায়ে কান ভারী ভারী লাগবে এবং ব্যথা হবে। মধ্যকর্ণে জমে থাকা তরলে জীবাণুর বিস্তার ঘটলে তা পুঁজে পরিণত হয়। এ অবস্থায় কানে তীব্রব্যথা অনুভূত হয়। যেহেতু শীতের সময় ঠাণ্ডা বেশি থাকে এবং হাঁচি-সর্দি-কাশি বেশি হয়, তাই কানের এ সমস্যা শীতেই বেশি হয়। অনেকেই এ সমস্যা বেশি গুরুত্ব দেন না। ভাবেন এমনিতেই সেরে যাবে। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। কানবন্ধ বা কানব্যথায় যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে যেতে পারে, কানের ভেতরে জমে থাকা তরল আঠাল হয়ে মধ্যকর্ণের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট করে দিতে পারে। তখন এটি দীর্ঘায়িত হয়।
অনেক সময় বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মধ্যকর্ণের নার্ভ সাময়িক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে মুখ বাঁকা হয়ে যেতে পারে। কাজেই চিকিৎসায় বিলম্ব করা মানেই জটিলতা আমন্ত্রণ জানানো। এ ধরনের রোগের চিকিৎসা বেশ সহজলভ্য। অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিঅ্যালার্জিক বা অ্যালার্জিরোধক ওষুধ, নাকের পথ এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া নালির সেই মুখটি খুলে দেওয়া ও সুগম করার নাকের ড্রপ দিয়েই চিকিৎসা শুরু হয়। তবে এটি নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে হতে হবে।