তীর সংরক্ষণে লাগামহীন ব্যয় প্রস্তাবনা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা

নদীভেদে তীর সংরক্ষণ ব্যয়ের তারতম্য থাকার কথা স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু বড় ও মূল নদীর চেয়ে শাখা নদীতে তীর সংরক্ষণ ব্যয় অনেক বেশি। চলমান প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে যে পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে নতুন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। যেখানে চলমান প্রকল্পে ১২ কোটি থেকে ৩৪ কোটি টাকা প্রতি কিলোমিটার তীর সংরক্ষণে খরচ হচ্ছে, সেখানে যমুনা নদীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ি, পাটাগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকা সংরক্ষণের নতুন প্রকল্পে এই ব্যয় প্রায় ৭৩ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের এক পর্যালোচনায় জানা গেছে।

 

প্রকল্প প্রস্তাবনায় দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ি, পাটাগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকা সংরক্ষণ প্রকল্পে ৬ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ কাজসহ ৫০৯ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। এই জেলায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ হলো এক লাখ ৭৪ হাজার ৬০০ হেক্টর।

 

ব্রহ্মপুত্র ডান তীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রকল্পের আওতায় ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ সাল মেয়াদে কুড়িগ্রাম জেলার কাউনিয়া থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর উপজেলার ভেড়াখোলা পর্যন্ত ২১৭ কিলোমিটার এবং সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলা থেকে শাহাজাদপুর উপজেলার ভেড়াখোলা পর্যন্ত প্রায় ৭৯ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বিগত কয়েক বছরের বন্যায় নদীর ডান তীর ভাঙনের ফলে বাহুকা-শুভগাছা এলাকা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সন্নিকটে চলে এসেছে। বাঁধের টো-লাইনসহ প্রায় ২০০ মিটার এলাকা নিয়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রকল্প এলাকায় প্রায় ৬ কিলোমিটার নদী তীর ভাঙনের সম্মুখীন।

 

প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত কাজগুলো হলো ৬ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ, ৬.৫৪ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ, ১২.৪০ কিলোমিটার বাঁধের টপ পাকাকরণ এবং ১.১৫ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্বাসন ও শক্তিশালীকরণ। আড়াই বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে পরামর্শ দেয়া হয়।

 

কারিগরি কমিটি সুপারিশ করেছিল ৭.৭ কিলোমিটার। কিন্তু পাউবি সেটা কমিয়ে ৬ কিলোমিটার করেছে। বাকি ১.৭ কিলোমিটার বাস্তবায়নাধীন যমুনা নদীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার খুদবান্দি, সিংড়াবাড়ি ও শুভগাছা এলাকা সংরক্ষণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পে সংশোধিততে ১.৯৫৫ কিলোমিটার কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্পে ৬ হাজার মিটার বা ৬ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৫ কোটি ২৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। প্রতি মিটারে খরচ সোয়া ৭ লাখ টাকা; অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে ৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অথচ চলমান সিলেটের কালিকিনি-কুশিয়ারা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে কিলোমিটারে খরচ ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, নোয়াখালীর মুসাপুরে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ২২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, গড়াই নদীর তীর সংরক্ষণে ২৬ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

 

সেখানে এটির ব্যয় অনেক বেশি। বাঁধ পুনরাকৃতিকরণে ৬.৫৪০ কিলোমিটারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এখানে কিলোমিটারে দেড় কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পের আওতায় ১২.৪ কিলোমিটার বাঁধের টপ পাকাকরণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ৮৫ লাখ টাকা। এখানে ১.১৫০ প্রতিরক্ষামূলক কাজ পুনর্বাসন ও শক্তিশালী করতে ব্যয় হবে ৪৬ কোটি ৭৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। ফলে কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ৪০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

 

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মো: জাকির হোসেন আকন্দ স্বাক্ষরিত কার্যপত্রে তিনি বলেছেন, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে দুই কোটি টাকার যে বরাদ্দ ধরা হয়েছে, তা বাদ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার জন্য বলেছে কমিশন। ৬ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ, প্রতিরক্ষার কাজ, বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ, বাপাবোর প্রধান প্রকৌশলীর (নকশা) নেতৃত্বে গঠিত কারিগরি কমিটির মতামতসহ যৌক্তিক পর্যায়ে করার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি আগে ও পরে কখন কোথায় কী কাজ করা হয়েছে, তা ডিপিপিতে উল্লেখ করা জন্য বলা হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
All rights reserved www.mzamin.news Copyright © 2023