স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা
দেশে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কীটনাশকের ব্যবহারও। অভিযোগ রয়েছে, সরকার এক দিকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করছে। অন্য দিকে পোকামাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহারে কৃষককে উৎসাহিত করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, রাসায়নিক দ্রব্য এবং অন্যান্য দূষণমূলক পদার্থ প্রায় ২০০-এর বেশি রোগের সৃষ্টি করে, যার মধ্যে ডাইরিয়া থেকে শুরু করে ক্যান্সারও রয়েছে। স্বাভাবিক কারণে বাড়ছে ওষুধের ব্যবহার। এমন একটি প্রেক্ষাপটে আজ ২ ফেব্রুয়ারি দেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস। দিবসটি পালন উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিশেষ বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদন করেন কৃষক, তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব কৃষি মন্ত্রণালয়ের। অথচ কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য উৎপাদনের জন্য কীটনাশক-রাসায়নিক সার ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়। অথচ এভাবে খাদ্য উৎপাদনের কারণে শত শত রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তা বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতে তাদের কাজ অধিক খাদ্য উৎপাদন করা, যার আরেকটি নাম হচ্ছে ‘খাদ্য নিরাপত্তা’। সেটা করতে গিয়ে এমনসব কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে যার মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১২টি কীটনাশককে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ করে ‘ডার্টি ডজন’ কীটনাশক নাম দিয়েছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমাদের দেশে সেই ডার্টি ডজন কীটনাশক অবাধে ব্যবহার হচ্ছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও দেখে না, কৃষি মন্ত্রণালয়ও দেখে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপদ খাদ্য বলে আলাদা কোনো খাদ্য নেই। যে কোনো খাদ্যই নিরাপদ হবে কিনা তা উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রি, ঘরে এনে রান্না ও পরিবেশন করা এবং খাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি পদে ‘নিরাপদ’ করার ব্যাপার আছে। কোনো একটি পর্যায়ে এর বিঘœ ঘটলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। খাদ্য যেখান থেকে উৎপাদিত হয় এবং খাবারের টেবিলে আসার আগ পর্যন্ত যত ধাপ পার হয়ে আসে তার মধ্যে অনেক কিছু যুক্ত হয়ে এ খাদ্যকে বিষাক্ত করে তুলছে। ভোক্তাদের পক্ষে উৎপাদন পর্যায়ে খাদ্য নিরাপদ করার সুযোগ কম বা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, কিন্তু তাদের সচেতনতা উৎপাদকদের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে বাধ্য কিংবা উৎসাহিত করতে পারে। ভোক্তারা নিজেদের অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনকে নিরাপদ করতে পারেন।
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে পুষ্টিসম্মত নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকল্পে ভেজালমুক্ত, নিরাপদ ও পুষ্টিসম্মত খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণে ক্যান্সার, কিডনিরোগ, বিকলাঙ্গতাসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি হয়। এ জন্য পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়গুলো জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে। এর সাথে সঙ্গতি রেখে বর্তমান সরকার জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে সর্বোচ্চ নিরাপদ মান নিশ্চিত করতে হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখার নিমিত্তে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। তাই জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে সর্বোচ্চ নিরাপদ মান নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। বর্তমানে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বস্তরের জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটানা গত ১১ বছর আমাদের সরকার কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ‘উন্নয়নের বিস্ময়’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দূরদর্শী সিদ্ধান্তে পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স, ১৯৫৯ রহিত করে যুগান্তকারী ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩, প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এ আইনের অধীনে আমাদের সরকার ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করে। তিনি বলেন, ‘শুধু তা-ই নয়, নিরাপদ খাদ্য আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আর্থিক বিধিমালা, ২০১৯’ এবং ‘নিরাপদ খাদ্য (খাদ্য স্পর্শক) প্রবিধানমালা, ২০১৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভেজাল খাদ্য শনাক্তকরণ ও নিরোধে অন-স্পট স্ক্রিনিং, মোবাইল কোর্ট এবং মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভেজাল খাদ্য রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিকল্পে প্রচারণামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় স্থাপন এবং ল্যাবরেটরি স্থাপন ও কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরি স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে পূর্বাচলে পাঁচ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।